কবিতা—দীপ্তেশ সেন
সেই সিম্ফনি যে তার স্থান, কাল, তাল, লয় ছেড়ে
আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে এক প্রাচীন ক্যানভাসে
যেখানে ডানা মেলেছে এক অদ্ভুত আলোকরাত্রি।
সরীসৃপের মতো রাতের জ্যোৎস্না-স্নাত চোখ
বয়ে যাচ্ছে সেই শস্যক্ষেতে,
তারার আলোর বলয়ে দিকশূন্য এক পাখি
ম্রিয়মাণ হয়ে কাঁদছে জ্যোৎস্নার অন্তরালে।
অনেক বছর পর দীর্ঘায়ু এক নীল রাতে,
আমি যন্ত্রণায় কাতর এক নাবিক,
হঠাৎ নিমগ্ন সেই দিকচক্রবালে।
সেই শস্যক্ষেত দিয়ে অনেক হেঁটে,
ছবির গহন কোণে এক নীল বিলয়বিন্দু,
তার মাঝে দানা বেঁধেছে এক চিত্রিত শূন্যতা।
সেখানে পৌঁছে দেখি তুমি দাঁড়িয়ে আছো
আমার অপেক্ষায়।
চাঁদ
এক রৌদ্রজল নীল স্তম্ভ,
তার পাশে নিয়ন আলোয়
এক চাঁদ দাঁড়িয়ে আছে।
এই চাঁদের অভিব্যক্তি বোঝা দায়,
তার পরনে জীর্ণ এক প্যাপিরাস,
তার এলোমেলো কেশ মিশে যাচ্ছে
ভগ্ন শহরের মতো সভ্যতার শেষ প্রান্তে।
তার নিস্তব্ধ অট্টহাসি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে
ব্রহ্মাণ্ডের সব কোণে কোণে।
তার জরাজীর্ণ চোখে শুধু ল্যাশের সুবাস,
তার রিক্ত মাংসপেশির তীব্র তেজস্ক্রিয়ায়
পুড়ে ছারখার হচ্ছে শহরের সব রাস্তা।
তবু সে দাঁড়িয়ে আছে
পৃথিবীর এক শেষ প্রান্তে,
দেখে মনে হয় মায়াবিনী কালরাত্রি।
ভালোবাসা তার ধ্বংসের উপহার,
শান্তি তার প্রকাণ্ড বিলাসিতা।
তার যোনি বয়ে সরীসৃপের মতো উঠছে সময়,
আলোর রসিকতা তার শেষ সম্বল।
মৃত্যু তাকে ছুঁয়ে দেখেনি কখনো,
মৃত্যু বোধহয় তাকে ভয় পায় ভীষণ।
শীতের শেষ রাতে যখন কুয়াশা নামে,
কিছু আদিম, পারমাণবিক রিপু গ্রাস করে তাকে।
তখন ক্লান্ত, নতজানু স্ট্রিটলাইটের মতো
চাঁদ দাঁড়িয়ে থাকে সভ্যতার শেষ প্রান্তে,
মায়াবিনী, শ্রোতস্বিনী।
Comments