Print This Publication

জগৎপালিকা জগদ্ধাত্রী—কুণাল রায়


জগৎপালিকা জগদ্ধাত্রী

নিরুপমা মহামায়া না না রূপে, গন্ধে এবং স্পর্শে এই নিখিল ব্রহ্মাণ্ডে বিরাজ করছেন। দেবী সত্বগুণে সরস্বতী, রজগুণে লক্ষ্মী এবং তমগুণে মহাকালী। কিন্তু এই মহামায়ার আরেক অংশ হচ্ছেন দেবী জগদ্ধাত্রী, অর্থাৎ এই জগৎ কে যিনি ধারণ করে আছেন। 

  দেবী দুর্গার হস্তে মহিষাসুর বধের পশ্চাতে, স্বর্গলোকে সুখ এবং শান্তির বাতাবরণ বিরাজ করে। দেবগণ সেই সুখে মত্ত হয়ে অমরাবতীতে দিন যাপন করতে থাকে। তবে দেবগণের মধ্যে এক অহংকারের সৃষ্টি হয়। ইন্দ্র, অগ্নি, বরুণ, যম প্রমুখ আপন আপন শক্তির অহমিকা তাঁদের চিত্তকে গ্রাস করে। তাঁদের মতে তাঁদের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে দেবী মহামায়া সকল অসুর নিধন করেছেন। দেবীর আপন কোন কৃতিত্ব নেই। সকল দেবতাদের তেজ রসে সৃষ্ট হয়েছিল দেবীর ভুবন মোহিনী কায়া! 

  দেবতাদের এই অহংকার সিক্ত আলোচনার মাঝে অকস্মাৎ এক অনন্ত প্রকাশের আবির্ভাব ঘটে। তিনি স্বয়ং দেবী হৈমবতী। দেবগণের দর্প চূর্ণের অভিপ্রায় তাঁর এই আবির্ভাব! তিনি সকল দেবতাদের উদ্দেশ্যে বলেন যে ওনারা ঠিকই বলেছেন । দেবগণের সমবেত শক্তি আসুরিক শক্তির নিবৃত্তি ঘটিয়েছে। তাই দেবী এক সামান্য পরীক্ষা নিলেন। আপন যোগবলে এক তৃণ খণ্ড তাঁদের সম্মুখে রাখলেন এবং বললেন আপন আপন শক্তির প্রয়োগে সেই সামান্য তৃণ খণ্ডকে স্থানচ্যুত করতে। দেবগণ পরিহাস করলেন। প্রয়োগ করলেন আপন আপন শক্তিধারা, কিন্তু প্রতিটি প্রয়াস নিষ্ফল হয়।দেবতারা আপন ভুল বুঝতে পেরে দেবীর শরণাপন্ন হন। সকল অহংকার বিসর্জন দেন। সেই সকল অহংকার বিন্দু মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয় কবন্ধাসুরের। 

    এই অসুর ছিলেন প্রবল প্রতাপী। তাঁর অট্টহাসিতে ত্রিভুবন ভীত , সন্ত্রস্ত। দেবীর সাথে এক প্রবল সংগ্রামে কবন্ধাসুর নিহত হয়। দেবী তাঁকে চক্রের দ্বারা শিরচ্ছেদ করেন। আসুরিক শক্তির বিনাশের পশ্চাতে দেবী জগদ্ধাত্রী রূপে বিশ্বজননী হয়ে উঠলেন। প্রসিদ্ধি লাভ করলেন ভক্তকুলের মাঝে।

  দেবী মূলত চতুর্ভুজ। ত্রিশূল, চক্র, তীর এবং ধনুক দ্বারা অলংকৃত। দেবীর কন্ঠে সর্প বলয়। সিংহবাহিনী। পদতলে কবন্ধাসুরের শির। অধর্মের পরাজয়। ধর্মের জয়। শক্তি, পরাক্রম এবং প্রাচুর্যের এক এবং অন্তিম প্রতীক। 

আজ মহানবমী। গৃহে গৃহে তারই উপাসনা। ঢাকা, কাসর, ঘণ্টা , সুগন্ধি ধুপ এবং অন্যান্য উপাচারে দেবী হয়ে উঠেছেন অনন্যা। মন্দিরে মন্দিরে ভক্তকুলের সমাগম। প্রার্থনা। উৎসবের মেজাজে সকলে। মহামায়ার আশীষ বর্ষিত হোক নিরন্তর!!


                 "শুভ জগদ্ধাত্রী পূজা"

  

                                         - কুণাল রায়।


( সহ অধ্যাপক, ইংরেজি ও যোগাযোগ বিভাগ, জর্জ গ্রুপ অফ কলেজেশ, কলকাতা)

Comments

Popular Posts