কবিতা—কুণাল রায়
বৃষ্টি তোমারও বয়স হয়েছে!
প্রতি মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিনে,
মনে পড়ে কেবল তোমারই কথা,
অঝোর ধারায় স্পর্শ কর এই অবনীকে,
সিক্ততা প্রদান কর ভূমিকে,
শীতলতা প্রদান কর এই হৃদয়কে,
বাতাসে ভর করে আপন খেলায় মেতে ওঠো তুমি!
সেই তুমি বৃষ্টি,
এসেছিলে জীবনে,
সুখের স্পন্দন খুঁজে পেয়েছিলাম সেদিন-
নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে,
সরে গেলাম-
মেনে নিয়েছিলাম,
প্রকৃতির নিয়ম,
সময়ের লীলা!
কিন্তু অনন্ত রূপ তোমার,
কখনো প্রেমিকা,
কখনো মুক্তোর বিন্দু,
কখনো দু চোখ বেয়ে কান্না!
কখনো বা প্লাবন,
করালবদনা-
ধ্বংসের প্রাচুর্য,
বাঁধে এক বাসা!
সেই বৃষ্টি তুমি,
বয়স বেড়েছে তোমার,
লাবণ্য তোমার অক্ষুণ্ন,
সৌন্দর্য তোমার অমলিন,
দর্প তোমার অচল,
বৃষ্টি-
আমার তুমি,
সবার তুমি,
এক সত্য,
এক উপলব্ধি!!
মীরা
কৃষ্ণভক্ত মীরা,
মন্দিরের আরতিতে মগ্ন,
কুন্দ ফুলের মালা গেঁথে,
পরাবে সে গিরিধারীকে!
ভক্ত ভগবানের এই লীলার মাঝে,
সখীরা এল প্রাসাদে!
মেরতার রাজকুমারী,
ক্রীড়ায় মগ্ন,
সখীদের সাথে!
তবু উদ্দেশ্য অটল,
তীব্র বাসনা,
ভগবান দর্শনের!
অকস্মাৎ মেঘাবৃত আকাশ,
নেমে এল বৃষ্টি,
অঝোর ধারায়,
প্রাসাদে পলায়ন করল সখীরা,
কিন্তু মীরার ওষ্ঠে,
কৃষ্ণ নাম!
ছোট্ট এক নীলকন্ঠ পাখির-
ডাকে সাড়া দিয়ে,
মীরা করল তাকে অনুসরণ!
ক্রমে গতি বৃদ্ধি পেল,
চরণযুগলের!
সকল প্রতিকূলতা,
উপেক্ষা করে,
ছুটল সে-
লোপ পেয়েছে সকল-
পার্থিব জ্ঞান!
কৃষ্ণভক্তিতে আচ্ছন্ন সে!
নদী,
জলাশয়,
মরুভূমি,
অতিক্রম করে,
পৌঁছালো এক মনোরম প্রান্তে!
পেল তাঁর প্রভুর দেখা!
চিনতে পারল না সে।
প্রভু চাইল কুন্দ ফুলের মালা,
অস্বীকার করল মীরা,
ভগবানের বাঁশি চাইল সে!
কিন্তু প্রভু-
সিদ্ধান্ত অচল তাঁর!
কুন্দের মালা ধারণ করল ভগবান,
মীরা স্পর্শ করল বাঁশিকে-
এক অলৌকিক কম্পন,
ঐশ্বরিক জ্যোতির স্পর্শে,
সংজ্ঞা হারাল মীরা সেদিন!
অনাবিল ভক্তির স্রোত,
পরিণত হয়নি!
তাই বুঝি-
ঈশ্বরকে কাছে পেও,
চিনতে পারলো না মীরা,
ভক্তের ভক্তি পরীক্ষার সম্মুখীন,
চিরদিন,
চিরকাল!
যন্ত্রণার সমাপন ঈশ্বরের পায় নয়,
যন্ত্রণার সমাপ্তি ঈশ্বরের আরাধনায়ে নয়,
সমাপন-
তাঁর কায়ায়ে বিলীন,
হতে পারলে,
অতীব কঠিন অভিপ্রায়,
প্রয়াস,
সংকল্প!!
Comments